বাংলায় ঋতুর পরিক্রমায় বর্ষা অন্যতম ঋতু। এ সময় অতি বৃষ্টির ফলে কৃষিতে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। কৃষির এই ক্ষতি মোকাবেলায় বিশেষ ব্যবস্থাপনা অবলম্বন করতে হবে। তাই ভাদ্র মাসে কৃষিতে করণীয় নিম্নরুপ:
* আউশ ধানের বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হবে। ব্রি ধান 48, ব্রিধান 65, ব্রি ধান 82, ব্রি ধান 83, ব্রি ধান 85, ব্রি দান 98, বিনাধান 19 ও বিনাধান 21 জাত গুলোর বীজ সংগ্রহ ও আগামীতে আবাদের জন্য প্রচার করতে হবে।
* বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে নাবী রোপা আমনের পূর্ব-প্রস্তুতি হিসেবে উঁচু জায়গায় এবং ভাসমান বীজতলায় চারা উৎপাদন করতে হবে।
* নিচু জমি থেকে পানি নেমে গেলে এসব জমিতে এখনো রোপা আমনা ধান রোপণ করা যাবে। দেরিতে রোপণের জন্য বিআর 22, বিআর 23, ব্রিধান 38, ব্রি ধান 46, ব্রি ধান 62,, ব্রি ধান 75 বিনাশাইল, নাইজারশাইল বা স্থানীয় উন্নত ধান বেশ উপযোগী। দেরিতে চারা রোপানের ক্ষেত্রে প্রতি গুছিতে 5-7 টি চারা দিয়ে ঘন করে রোপণ করতে হবে।
* রোপা আমন ধান ক্ষেতের অন্তর্বতীকালীন যত্ন নিতে হবে।
* রোপা আমন ধানে জমিতে ইউনরয়া সার উপরিপ্রয়োগ কুরন।
* রোপা আমন ধানে মাজরা, পামরি, চুঙ্গুী, গলমাছি পোকার আক্রমণ হতে পারে। এছাড়া খোলপড়া, পাতায় দাগ পড়া রোগ দেখো দিতে পারেে। এক্ষেত্রে নিয়মিত জমি পরিদর্শন করে, জমিতে খুঁটি দিয়ে, আলোর ফাঁদ পেতে, হাতজাল দিয়ে পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাছাড়া শেষ কৌশল হিসেবে সঠিক বালাইনাশক সঠিক মাত্রায়, সঠিক নিয়মে, সঠিক সময় ব্যবহার করতে হবে।
*বন্যার পানিতে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য আগাম রবি ফসল চাষের প্রস্তিুত নিন। যেমন: যেসব জমিতে উফশী বোরো ধানের চাষ করা হয় সেসব জমিতে স্বল্প মেয়াদী বারি সরিষা-14, বারি সরিষা-1,2,3 এবং বিনা সরিষা 9 জাতের সরিষা চাষের প্রস্তুতি নিতে হবে।
* বন্যার পানি রেমে ািওয়ার সাথে সাথে বিনা চাষে মাসকলাই ও খেসারী বপন করুন।
* বন্যায় তোষা পাচটর বেশ ক্ষতি হয়। এতে ফলনের সাথে সাথে বীজ উৎপাদনেও সমস্যা সৃটি হয়। নাবী পাট বিএডিসি1, বিজোারআই’ পাট 1 বীজ উৎপাদনের জন্য ভাদ্রের শেষ পর্যন্ত দেশী পাট এবং আশ্বিনের মাঝমাঝি পর্যন্ত তোষা পাটের বীজ বোনা যায়।
* ভাসমান বেডে লাল-শাক, পালং শাক, ওল কপি, বাঁধা কপি, টমেটো ইত্যাদি সবজি ও আধা হুলদ মসলা জাতীয় ফসলে চাষ করা যায়। পানি নেমে গেলে স্তুপটি যথা স্থানে বসিয়ে মাচা দিতে হবে। অনুরুপভাবে শিমও চাষ করা যায়।
* ভূট্টার বীজ, লাল শাক, পালং শাক, ডাটা শাক প্রভৃতি বিনা চাষে বপনের জন্য সংগ্রহ করুন। মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত টবে, বক্সে, পলি ব্যাগে, ড্রামে উঁচু জায়গায় শাক সবজির চারা উৎপাদন করুন।
* ডাল ও তেল জাতীয় ফসলের বীজ অনুমোদিত ছত্রাকনাশক দ্বারা শোধন করে বুনতে হবে। এত ফুট রট/ কলার রট রোগের প্রাদূর্ভাগ কম হবে।
* বন্যার পানি সম্পুর্ণভাবে নেমে যাওয়ার পর বিনাচাষে মালচিং করে আলু ডায়মন্ট, কার্ডিনাল) আবাদ করার প্রস্তুতি নিন।
* উঁচু স্থানে পলি ব্যাগ/বীজতলা পদ্ধতিতে আখের চারা উৎপাদন করুন।
* এসময় আখ ফসলে লাল পঁচা রোগ দেখা দিতে পারে। রোগমুক্ত বীজ বা শোধন করা বীজ ব্যবহার করলে অথবা রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করলে লাল পঁচা রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। লাল পঁচা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন কয়েকটি আখের জাত হচ্ছে ঈশ্বরদী-16,20,30।
* আগাম শীতকালীন ফুলকপি, বাধাকপি, ওলকপি, পালং শাক, বেগুন, টমেটো সবজি চাষের প্রস্তুতি নিন।
* ভাদ্র মাসে ফলদবৃক্ষ ও ঔষধি চারা রোপণ করুন।
* রাস্তার পাশে এবং বাড়ির আশে পাশে দলীয়ভাবে তাল এবং খেজুরের চারা রোপণ করুন। বৃষ্টি এবং বন্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সকল প্রকার বীজ সযত্নে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রয়োজনে রৌদ্রোজ্জল দিনে ঘরে সংরক্ষিত বীজ শুকিয়ে নিয়ে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করনু। তাছাড়া কৃষির যে কোন সমস্যায় উপজেলা কৃষি অফিস অথবা কৃষি কল সেন্টারের 16123 নম্বরে বা কৃষক বন্ধু সেবার 3331 নম্বররে কল করে বিশেষঙ্গদের পরামর্শ নিতে পারেন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস